

প্রসংগ যাকাতের সুষ্ঠু বন্টন: রেবিন চৌধুরী,ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি হচ্ছে যাকাত, যা দরিদ্র বিমোচনে সহায়ক একটি বিশেষ পথ। তাই যাকাতের সুষ্ঠু বন্টনই পারে দেশের হতদরিদ্র পরিবার গুলোকে স্বাবলম্বী করে তুলতে।
প্রথমে যা বলতে চাই তা হলো, আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে দেখতে পাই প্রতিবছর দেশের বড় বড় শিল্পপতিদের যাকাতের একটা বড় অংশ চলে যায় সরকারের যাকাত ফান্ডে। দেখা যায় শিল্পপতিরা মোটা অংকের চেক হাতে আনন্দচিত্তে লম্বা লাইনে দাড়িয়ে আছেন, নিজ সম্পদের যাকাতের চেক হস্তান্তর করার জন্য। পরবর্তীতে সেই টাকা কারা পেয়ে কতটা উপকৃত হলো সেটা তারা জানেন কি না আমরা সাধারণের বোধগম্য নয়। সে যাই হোক জীবন যতই কর্মব্যস্ত হোক নিজের কষ্টার্জিত সম্পদের মধ্যের যে অংশটি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা যাদের কে দিতে নির্দেশ করেছন আদোও তারা সেটা পাচ্ছে কি না সেটা নিশ্চিত হওয়াটা যাকাত দাতার জন্য অতি জরুরি । আপনি অনেক টাকার মালিক কিন্তু এমন ও আছে, আপনার অনেক নিকট আত্মীয় বা প্রতিবেশি যারা আত্মমর্যাদার কারনে কারো কাছে হাত পাততে পারছেনা, অথচ আপনি সেচ্ছায় কিছু দিলে তারা খুশিমনে গ্রহন করবে। আপনি চাইলে একটু মোটাঅংকের অর্থ দিয়ে সেই পরিবারের যোগ্য কোন ব্যক্তিকে একটা ছোটখাটো ব্যবসা কিংবা রিকশা বা অটো কিনে দিতে পারেন। যা থেকে সে বছরের পর বছর পরিারের মুখে আহার তুলে দিতে পারবে, আর আপনিও এর সওয়াব পেতে থাকবেন। এক্ষেত্রে একটা বিষয় খেয়াল রাখা আবশ্যক যে আপনি যাকাত থেকে তাকে দিচ্ছেন সেটা বললে সে হয়তো কষ্ট পাবে এমন আশংকা হলে আল্লহ সুবহানাল্লাহু সেটা না বলাই উত্তম বলেছেন। এটা এমনিতেই মানুস আচ করে নেয়। দেশের শিল্পপতিরা এভাবে আত্মপ্রকাশের মোহে না পড়ে যদি প্রকৃত হকদারের হক আদায়ের উদ্দেশ্যে যাকাতের অর্থ বন্টন করেন তবে বাংলাদেশ একটি মধ্যমআয়ের দেশ হতে বেশিদিন লাগবেনা। আর এতে যাকাতদাতারাও প্রশংসিত হতে থাকবেন। কারন উপকারীর উপকার স্বীকার করেনা এমন অকৃতজ্ঞের সংখ্যা খুব কমই হয়।
দ্বিতীয়তঃ অনেকেই যাকাতের অর্থদিয়ে শাড়ি লুঙ্গি কিনে বিতরন করে থাকেন, যা হতদরিদ্র লোকগুলো পরবর্তীতে খুব সামান্য অর্থের বিনিময়ে বিক্রি করে টাকা সংগ্রহ করতে দেখা যায়। আর দোকানিরা যাকাতের কাপড় নামকরণ করে যে সব কাপড় বাজারজাত করেন সেটা পরিধান করে একজন দরিদ্র মা বোনের পক্ষে আব্রু রক্ষা করা মুশকিল। তাহলে ভাবুনতো এমন যাকাত আপনার জন্য কেমন সওয়াব বয়ে আনছে! তা ছাড়া প্রতিবছর এ ধরনের যাকাত সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখাযায়, যাকাত দাতার বন্ধ গেইটে ফকির মিছকিনরা ভীড় জমায়। উনি হয়তো কোন নির্দিষ্ট সময়ে তা পরিবেশন করবেন বলে ঠিক করছেন, কিন্তু তারা সেটা ফুরিয়ে যাবার ভয়ে আগে বাগে এসে গেইটে ধাক্কা লাগায় আর সেই বাড়ির দারওয়ান লাটি হাতে গেট খুলে এলোপাতাড়ি দু’চার ঘা পিঠে দিয়ে আবার গেট বন্ধ করে দেয়। শুধু তাই নয় সেখানে ফকিরে ফকিরেও মারামারি করে। ভিড়ের চাপে বয়স্করা মারাও যায় এর সংখ্যা সারাদেশে নেহাত কম নয়। তাহলে ভাবুনতো এরকম নগদ ১০০/ ৫০০ টাকা বা শাড়ি লুঙ্গি বিতরন করে ফকিরমেলা সৃষ্টি করে আপনি কতটা সমাজ সেবা করলেন। আপনার যাকাত নিতে গিয়ে যারা প্রাণ হারালো তাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী কে হলো।? তাই জনস্বার্থে এরকম পদ্ধতি বন্ধ করা উচিৎ নয় কি?
ধরুন আপনার মাত্র ৫০,০০০ হাজার টাকা যাকাত হয়েছে, আপনি এমন কাউকে খোজে নিন আপনার উপর যার যার হক আগে বর্তায়, তেমন লোক, তাদের একটা সেলাইমেশিন কিংবা ঘরের চালা নির্মানের জন্য উন্নতমানের ঢেউটিন নিজের হাতে কিনে দিন কারন সে হয়তো টাকাটা এভাবে কাজে লাগাতে পারবেনা যেহেতু অভাব তাকে ঘিরে আছে। আল্লাহ আমাদের সবার দান কে কবুল করে উত্তম প্রতিদান দান করুন আমিন।
লেখিকা: কবি রেবিন চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র।
আপনার মতামত লিখুন :