সিলেট বিডি ভিউ: কবি ও গল্পকার জ্যোৎস্না খানের পৈতৃক নিবাস হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ হলেও বৈবাহিক সুত্রে তাঁর ঠিকানা বর্তমানে মৌলভী বাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায়।লেখিকার নানা বাড়িও একই উপজেলায় হওয়ায় কমলগঞ্জের প্রতি তাঁর আত্মীক সম্পর্কের পাল্লা তুলনামূলক ভাবে বেশ ভারী । তিনি কৈশোরে বাবা-মা'র সাথে বিলেতে আগমন করেন এবং বিগত ৩৩ বছর যাবৎ ইংল্যাণ্ডের ম্যানচেষ্টার শহরে বসবাস করছেন। একটি শিক্ষিত ও প্রতিষ্টিত পরিবারের ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি সর্ব জ্যৈষ্ঠ। তাঁর ভাইবোনেরা সবাই উচ্চশিক্ষা লাভের পর স্ব-স্ব ক্ষেত্রে স্বনামের সাথে অধিষ্টিত । এদের মধ্যে একজন ব্যারিষ্টার , একজন ক্যামিকেল ইঞ্জিনিয়ার, একজন শিক্ষক ও আরেকজন ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে ( NHS) গুরত্বপূর্ণ পদে কর্মরত। তিনিও বিলেতের স্কুল ও কলেজে শিক্ষা জীবন শেষ করে ম্যানচেষ্টার সিটি কাউন্সিলের অধীনে বিগত ১৮ বছর যাবৎ কর্মরত আছেন। তাছাড়া বিভিন্ন সময়ে কাউন্সিলের অধীনে দুভাষীর কাজও করেছেন।
কৈশোরে বিলেতে আসা এই লেখিকার লেখালেখির জগতে আগমন অনেকটা নাটকীয়তার মধ্য দিয়েই বলা যেতে পারে। দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশী সময় ধরে ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠা, লেখাপড়া করা এই লেখিকা বাংলা ভাষা চর্চা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ছিলেন। তাঁর অদম্য ইচ্ছা শক্তি তাঁকে তাঁর সুপ্ত প্রতিভা বিকাশে বিলেতে বসবাসরত বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য এক অনুসরণীয় ও অণুকরণীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ করেছে। তিনি দীর্ঘ ৩৩ বছর ধরে পশ্চিমা সংস্কৃতির সাথে খাপ খাইয়ে সরকারী চাকুরী করে, নিজের সাংসারিক কাজকর্ম করেও বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষাকে হৃদয়ে আঁকড়ে ধরে আছেন। প্রতিকুল পরিবেশ ও সময় তাঁকে কিছুতেই নিজের শিকড় থেকে এতটুকু বিচ্যুত করতে পারেনি। দীর্ঘ দিন যাবৎ প্রবাসে স্থায়ীভাবে বসবাস করেও দেশ ও দেশের মানুষের প্রতি তাঁর ভালবাসা ও ব্যাকুলতার প্রকাশ আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিনিয়ত দেখতে পাই। তিনি দেশের দুস্থ্য ও অসহায় মানুষকে মানবিক ও আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা নিয়মিত করে আসছেন। নিজের এলাকাসহ পরিচিত মহলে জ্যোৎস্না খান একজন দানশীল মহিলা হিসাবেই অধিক পরিচিত।
শুরুতেই বলেছি লেখিকা লেখালেখির জগতে আগমন অনেকটা নাটকীয়ভাবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দিয়েই তাঁর লেখা শুরু। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর লেখার ধরন ও স্বাতন্ত্রতা দেখে দিনদিন লেখার পাঠকপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। পরিবার, শুভাকাঙ্ক্ষী ও পাঠকদের উৎসাহ, অনুপ্রেরণা তাঁকে লেখালেখিতে আরও আত্মবিশ্বাসী ও মনোযোগি করে তুলে।দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া তাঁর লেখা ছাপাতে থাকে এবং বৃটেনের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলগুলো থেকে তাঁর সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়। লেখিকার স্বামীও একজন মননশীল লেখক। বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও সামাজিক মাধ্যমে স্বামীর লেখা পড়ে তিনি আরও উৎসাহিত হন এবং ধীরে ধীরে তাঁর সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে থাকেন। গত বছর তিনেক ধরে তিনি একের পর এক কবিতা ও গল্প লিখে যাচ্ছেন। তাঁর লেখার ধরন বা মুন্সিয়ানা দেখলে কিছুতেই একজন নব্য লেখকের কাতারে তাঁকে দাঁড় করাতে পারবেন না। লেখা পড়লে তাঁকে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রাজ্ঞ লেখিকা হিসাবেই মনে হবে। তাঁর লেখা ছোট গল্প ও কবিতা দেশে বিদেশে বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে এবং প্রচুর পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। লেখিকার প্রতিটি লেখায় সমাজের চলমান ঘটনার প্রতিচ্ছবি ফুঁটে উঠে। লেখার মধ্যে তিনি তাঁর একান্ত অনুভূতিগুলি ও সমাজের অসঙ্গতিগুলি তুলে ধরার চেষ্টা করেন। বর্তমানে বৃটেনে বাংলা ভাষাভাষী জনপ্রিয় মহিলা লেখিকাদের মধ্যে তিনি লেখালেখিতে তাঁর স্থানটিও করে নিয়েছেন।
লেখিকার সদ্য প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ "রহস্যঘেরা বাংলো" তাঁর এক অনন্য সৃষ্টি। সুন্দর শব্দশৈলী, সুবিন্যস্ত বর্ণনা ও গল্পের ধারবাহিকতা অক্ষুন্ন রেখে চমৎকার আটটি বাস্তবধর্মী গল্পের সমন্বয়ে লেখা বইটি ইতিমধ্যেই যথেষ্ট পাঠকপ্রিয়তা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। বাঙ্গালী গল্প পিপাসু পাঠকদের গল্প তৃষ্ণা মিটাতে তাঁর গল্পগ্রন্থটি সহায়ক হবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।
ব্যক্তিগত জীবনে জ্যোৎস্না খান স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে ইংল্যান্ডের ম্যানচেষ্টার শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন । তাঁর তিন সন্তানদের সবাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত। মিষ্টিভাষী সদালাপী পরহিতৈষী এই লেখিকা দেশে-বিদেশে পরিচিত সকলের কাছে অত্যন্ত প্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব। তাঁর সদাচারন ও আন্তরিকতার মোহনীয় গুণ আপন-পর সবার কাছে তাঁর আলাদা একটা ইমেজ তৈরী করেছে।এই প্রতিভাবান ও গুণধর ব্যক্তিত্বের লেখালেখির অব্যাহত এই ক্রমধারা তাঁকে আরও উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাবে অনেকের বিশ্বাস।
তথ্য সূত্র: সৈয়দ মাসুম এর লিখা "বিলেতে কমলগঞ্জের শতজন" বই থেকে নেয়া।
Editor and Publisher: Foysol Ahmed Malik,
Office: Osmaninagar, Sylhet bangladesh. Email: sylhetbdview@gmail.com,
Mobile: WhatsApp: 01711338911
www.sylhetbdview.com