ক্বীনব্রীজ ও আলী আমজাদের ঘড়ি


admin প্রকাশের সময় : মে ১৯, ২০২৫, ৮:১৫ পূর্বাহ্ন /
ক্বীনব্রীজ ও আলী আমজাদের ঘড়ি

সিলেট বিডি ভিউ: সিলেট নাম উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে ক্বীন ব্রীজের নামটি বেশ গর্বের সঙ্গেই উচ্চারিত হয়। সিলেটের প্রবেশদ্বার সিলেটের কীন ব্রীজ । সুরমা নদীর ওপর স্থির দাঁড়িয়ে এই ব্রীজ পথচারীদের জানান দেয় যুগ যুগান্তরের নানা রঙের ইতিহাসের। দীর্ঘদিন অবহেলিত থাকার পর এ অন্যতম ঐতিহাসিক নিদর্শনটি সাম্প্রতিক কালে সংস্কার করা হয়েছে ফলে আরো রঙে ,আরো সাজে সেজেছে ক্বীন ব্রীজ।

ইতিহাস থেকে ব্রীজটি সম্পর্কে নানা কথা জানা গেছে। গত শতকের তিরিশের দশকের দিকে আসাম প্রদেশের গভর্ণর ছিলেন মাইকেল ক্বীন। তিনি তখন সিলেট সফরে আসেন। তার স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতেই এ ব্রীজটি নির্মাণ হয়। ইতিহাসবিদদের মতে, সে সময় আসামের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল ট্রেন। সঙ্গত কারণেই সুরমা নদীতে ব্রীজ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। রেলওয়ে বিভাগ ১৯৩৩ সালে সুরমা নদীর ওপর ব্রীজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় । ১৯৩৬ সালে ব্রীজটি আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়। ব্রীজটির নামকরণ করা হয় গভর্ণর মাইকেল ক্বীনের নামে। ক্বীন ব্রীজ লোহা দিয়ে তৈরী। এর আকৃতি ধনুকের ছিলার মত বাঁকানো। ব্রীজটির দৈর্ঘ্য ১১৫০ ফুট। প্রস্থ ১৮ ফুট। ব্রীজ নির্মাণে তখনকার দিনেই ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৫৬ লাখ টাকা।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, তৎকালীন আসাম সরকারের এক্সিকিউটিভ সদস্য রায় বাহাদুর প্রমোদ চন্দ্র দত্ত এবং শিক্ষামন্ত্রী আব্দুল হামিদ ব্রীজটি নির্মাণের ক্ষেত্রে অশেষ অবদান রাখেন।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ডিনামাইট দিয়ে ব্রীজের উত্তর পাশের একাংশ উড়িয়ে দেয়। স্বাধীনতার পর কাঠ ও বেইলী পার্টস দিয়ে বিধ্বস্ত অংশটি মেরামত করা হয়। পরবর্তীতে তা হালকা যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ের সহযোগিতায় ব্রীজের বিধ্বস্ত অংশ কংক্রীট দিয়ে পুনঃনির্মাণ করা হয়। তৎকালীন নৌ বাহিনীর প্রধান রিয়াল এডমিরাল এম এইচ খান সংস্কারকৃত ব্রীজটি উদ্বোধন করেন।

ব্রীজটি এক নজর দেখার জন্য প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক পর্যটক ভিড় জমান।

সিলেট শহরের কেন্দ্রস্থলে ক্বীনব্রীজ ।

 

আলী আমজাদের ঘড়ি

ঐতিহাসিক তথ্য মতে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার পৃথিম পাশার জমিদার আলী আমজাদ ১৮৭৪ সালে সিলেট জেলার সুরমা নদীর তীরবর্তী স্থানে এই অনন্য সুন্দর স্থাপনাটি তৈরী করেন। তাঁর নাম অনুসারে এটিকে আলী আমজাদ এর ঘড়ি হিসেবে অভিহিত করা হয়। ১৮৭৪ সালে সিলেট জেলা আসাম প্রদেশের সাথে একত্রীভুক্ত হয়। তখন এই নিয়ে সিলেটে তীব্র প্রতিবাদ হয়। সিলেটের জনগণকে শান্ত করার জন্য তৎকালীন বড়লাট লর্ড নর্থ ব্রম্নক সিলেট সফর করেন এবং বড়লাটের সফর উপলক্ষে এবং স্থানীয় জনসাধারণের সুবিধার্থে জমিদার আলী আমজাদের নিজ তহবিল হতে এই ঘড়িটি নির্মাণ করা হয়।

প্রায় ১৪০ বছর যাবৎ উক্তটি ঘড়িটি আলী আমজাদের স্মৃতি বহন করে আসছে। সম্প্রতি সিলেট সিটি কর্পোরেশেনের উদ্যোগে ঘড়িটি আধুনিকায়ন ও মেরামত করা হয়। এটি সিলেট জেলার একটি অন্যতম পর্যটন আকষর্ণীয় স্থান। দেশী-বিদেশী অনেক পর্যটক এই ঘড়িটি একনজরে দেখার জন্য প্রতিনিয়ত ভিড় জমায়।

অবস্থান:সিলেট সার্কিট হাউজ ও ক্বিন ব্রিজ সংলগ্ন।

যোগাযোগ ব্যবস্থা:সিলেট রেলওয়ে স্টেশন অথবা কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল হতে ১ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে গেলেই ঐতিহাসিক আলী আমজাদ ঘড়িটির অবস্থান।

ঘড়িঘরের পরিমাপ:দৈর্ঘ্য: ৯ ফুট ৮ ইঞ্চি ; প্রস্থ: ৮ ফুট ১০ ইঞ্চি; নীচ থেকে ছাদ পর্যন্ত উচ্চতা: ১৩ ফুট; ছাদ থেকে ঘড়ি অংশের উচ্চতা: ৭ ফুট ; ঘড়ির উপরের অংশের উচ্চতা : ৬ ফুট ; মোট উচ্চতা : ২৬ ফুট।